উমরাহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি হজের মতো বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু যেকেউ যেকোনো সময়ে পালন করতে পারেন। উমরাহ মূলত পবিত্র মক্কা শরীফে করা হয় এবং এতে কিছু নির্দিষ্ট ইবাদত ও নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক।
উমরাহ করার সময় মুসলিমদের আত্মিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া উমরাহ একটি ছোট হজের মতো বিবেচিত হলেও এতে কিছু বিশেষ দোয়া ও ইবাদতের নিয়ম আছে যা পালন করলে ইবাদত আরও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়।
উমরাহ করতে গেলে মুসলিমদের ইহতিয়াত সহকারে সফর, পবিত্র স্থানসমূহে পা রাখা এবং পবিত্র কাবার চারপাশে তাওয়াফ করা প্রয়োজন। এছাড়া ইহরাম পরিধান, সাইয়ে করা এবং সালাম ও দোয়া পাঠ করা উমরাহর মৌলিক অংশ।
এটি শুধু শারীরিক কষ্টের প্রমাণ নয়, বরং আত্মিক ধ্যান ও ইবাদতের অংশ। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করবো উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া, যেন যে কোনো মুসলিম সহজে এবং সঠিকভাবে উমরাহ করতে পারে।
উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া
উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিভক্ত:
- ইহরাম ধারণ করা: উমরাহ শুরু করার আগে মুসলিমরা নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করে যাকে ইহরাম বলা হয়। পুরুষদের জন্য দুইটি সাদা কাপড়, মহিলাদের জন্য সাদাকাপড় পরিধান প্রয়োজন। ইহরাম ধারণ করার সময় নিকটস্থ মসজিদ বা মিকাত (Miqat) থেকে নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করতে হয়। এটি উমরাহর প্রস্তুতি এবং আত্মিক সমর্পণের প্রথম ধাপ।
- তাওয়াফ করা: মক্কার কাবার চারপাশে সাতবার ঘূর্ণন করা হয়। এই সময় মনোযোগ সহকারে দোয়া ও ইবাদত করতে হবে। বিশেষ করে কাবার দিকে মুখ রেখে দোয়া ও প্রার্থনা পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাওয়াফ শেষে মুসলিমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে পারেন।
- সাইয়ে করা: এটি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার চলাফেরা করে করা হয়। এই সময় হালকা দোয়া ও মনোযোগ সহকারে ইবাদত পাঠ করতে হবে। সাইয়ে উমরাহর একটি অপরিহার্য অংশ।
উমরাহ করার সময় মুসলিমরা বেশ কিছু দোয়া পাঠ করে। যেমন-ইহরাম ধারণের সময় “লাবাইক আল্লাহুম্মা উমরাহ” দোয়া পাঠ করা হয়। তাওয়াফ ও সাইয়ে চলাকালে হৃদয় থেকে প্রার্থনা ও ব্যক্তিগত দোয়া পাঠ করতে পারেন। বিশেষ করে পাপমুক্তির জন্য দোয়া ও অন্যদের কল্যাণ কামনার জন্য ইবাদত করা উচিত।
উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া মুসলিমদের জন্য
মুসলিমদের জন্য উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। মুসলিমদের অবশ্যই শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো-যাত্রার সময় শান্ত থাকুন, কোনো ধরণের তর্ক বা মনস্তাত্ত্বিক চাপ এড়ান। উমরাহর প্রতিটি ধাপের সময় মনোযোগ সহকারে দোয়া ও ইবাদত করা আবশ্যক।
বিশেষত তাওয়াফ ও সাইয়ে চলাকালীন ব্যক্তি যেন ধৈর্য ধারণ করেন এবং পবিত্র স্থানের মর্যাদা বজায় রাখেন। দোয়া পাঠের সময় নিজের ও পরিবার-পরিজনের কল্যাণ কামনা করুন। এছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য হৃদয় থেকে তওবা করুন।
উমরাহ করার সময় মুসলিমরা অবশ্যই ইহরামের শিষ্টাচার ও নিয়ম মেনে চলবেন। যেমন-কোনো ধরনের শারীরিক ঝগড়া বা বিরোধ এড়ানো, নারী ও পুরুষের মধ্যে সৌজন্য বজায় রাখা। এই নিয়মগুলো মেনে চললে উমরাহ পবিত্র ও গ্রহণযোগ্য হয়।
উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া কিভাবে পালন করা যায়
উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া কিভাবে পালন করা যায়-এটি অনেক মুসলিমের প্রধান প্রশ্ন। প্রথমে সফরের পূর্বে দোয়া ও নিয়মের সংক্ষিপ্ত পাঠ করা উচিত। এটি মানসিক প্রস্তুতি ও আত্মিক দৃঢ়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মক্কায় পৌঁছালে প্রথমে ইহরাম ধারণ করুন এবং কাবার প্রতি মনোযোগ দিয়ে দোয়া পাঠ করুন। এরপর তাওয়াফ শুরু করুন। প্রতিটি ঘূর্ণনের সময় আল্লাহর কাছে নিজের ব্যক্তিগত দোয়া করুন। তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করুন। তারপর সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাইয়ে করুন। সাইয়ে চলাকালীন সময়ে দোয়া ও ইবাদত করুন।
উমরাহ শেষ করার সময় হালকা চুল কাটানো বা নখ কাটার মাধ্যমে ইহরাম অবসান করুন। এটি উমরাহর সুন্নতের অংশ। তারপরে শান্তি ও আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টির সঙ্গে সৌদি আরব থেকে ফিরুন। প্রতিটি ধাপের সময় নিয়ম মেনে দোয়া ও ইবাদত করলে উমরাহ গ্রহণযোগ্য হয়।
উপসংহার
উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া একটি পূর্ণাঙ্গ ইবাদত যা শারীরিক ও আত্মিকভাবে মুসলিমকে পরিপূর্ণতা দেয়। প্রতিটি ধাপ ইহরাম, তাওয়াফ, সাইয়ে, এবং দোয়া-সঠিকভাবে পালন করা হলে উমরাহ গ্রহণযোগ্য হয়।